জলবায়ু পরিবর্তন (অধ্যায় ১২)

পঞ্চম শ্রেণি (ইবতেদায়ী) - বিজ্ঞান - | NCTB BOOK
572
572

জলবায়ু হলো আবহাওয়ার দীর্ঘ সময়ের গড় অবস্থা। কোনো অঞ্চলের আবহাওয়া কখনো স্বাভাবিক থাকতে পারে আবার কখনো চরম অবস্থা দেখা দিতে পারে। আবহাওয়ার এই পরিবর্তন ঐ অঞ্চলের তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, কালবৈশাখী বা ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতা দ্বারা নির্ণয় করা যায়। আবহাওয়ার এই ভিন্নতা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। অপরদিকে, আবহাওয়ার উপাদানগুলোর উল্লেখযোগ্য স্থায়ী পরিবর্তন হলো জলবায়ু পরিবর্তন। কোনো স্থানের জলবায়ু হঠাৎ পরিবর্তন হয় না। তবে আমরা এখন জলবায়ু পরিবর্তন উপলব্ধি করতে পারি। চলো বিষয়টি যাচাই করা যাক।

Content added By

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন

254
254

পৃথিবীর সকল স্থানের তাপমাত্রা নির্ণয় করে গড় করার মাধ্যমে আমরা পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা নির্ণয় করতে পারি।

প্রশ্ন : পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার কি কোনো পরিবর্তন হচ্ছে?

কাজ : পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার পরিবর্তন

কী করতে হবে :

১. সহপাঠীদের নিয়ে ছোট ছোট দল তৈরি করি। 

২. পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার লেখচিত্রটি লক্ষ করি এবং বিভিন্ন বছরের গড় তাপমাত্রা খাতায় লিখি । 

৩. সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করে কাজটি সম্পন্ন করি।

Content added By

সারসংক্ষেপ

162
162

লেখচিত্রটিতে দেখা গেল, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রতি বছর উঠানামা করছে। তবে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন যে, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ছে। পৃথিবীর তাপমাত্রা এভাবে বেড়ে যাওয়াকে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বলে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদানের পরিবর্তন ঘটছে। যেমন— বৃষ্টিপাতের ধরন বদলে যাচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে পৃথিবীর জলবায়ুও ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে।

নিচের লেখচিত্রে দেখা যাচ্ছে যে, ঢাকার গড় তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়ছে। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে।

আলোচনা

পূর্ব অভিজ্ঞতা ও এই অধ্যায়ে যা শিখলাম তার আলোকে নিচের প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করি ৷

১. তোমার কি মনে হয় জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে? কেন এমন মনে হচ্ছে? প্রমাণসহ তোমার মতামত উপস্থাপন কর। 

২. যদি মনে করো জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে, তবে জলবায়ুর এই পরিবর্তন কী আমাদের জন্য ভালো না খারাপ ?

 

Content added By

গ্রিন হাউজ প্রভাব

154
154

প্রশ্ন : বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণ কী ?

কাজ : গ্রিন হাউজ প্রভাব

কী করতে হবে:

১. দুইটি পেট্রি ডিশে তিনটি করে বরফ খন্ড রাখি। 

২. একটি পেট্রি ডিশ কাচের গ্লাস বা বিকার দিয়ে ঢেকে দেই। 

৩. পেট্রি ডিশ দুইটিকে সূর্যের আলোতে রাখি। কোন ডিশটির বরফ আগে গলবে তা অনুমান করি । 

8. এবার ৩০ মিনিট অপেক্ষা করি। 

৫. কোনটির বরফ আগে গলছে তা পর্যবেক্ষণ করি। অনুমানটি কি সঠিক হয়েছে ? 

দ্রষ্টব্য: কাজটি পেট্রি ডিশের পরিবর্তে কাচের গ্লাস এবং বিকারের পরিবর্তে স্বচ্ছ প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করেও করা যাবে।

Content added By

সারসংক্ষেপ

134
134

দেখা গেলো যে, বিকার দিয়ে ঢেকে রাখা বরফখণ্ডগুলো খোলা বাতাসে রাখা বরফখণ্ডের তুলনায় আগে গলেছে। সূর্যের তাপ সহজেই বিকারের ভিতর প্রবেশ করতে পারে কিন্তু বিকার থেকে সহজে বের হতে পারে না। ফলে বিকারের ভিতর দ্রুত গরম হয়ে ওঠে। আর এটিই হলো গ্রিন হাউজ ধারণার মূল বিষয়। গ্রিন হাউজ হলো কাচের তৈরি ঘর যা ভেতরে সূর্যের তাপ আটকে রাখে। ফলে তীব্র শীতেও গাছপালা এই ঘরের ভিতর উষ্ণ ও সজীব থাকে।

গ্রিন হাউজ প্রভাব ও গ্রিন হাউজ গ্যাস

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলও গ্রিন হাউজের ন্যায় কাজ করে। বায়ুমণ্ডল হলো পৃথিবীকে ঘিরে থাকা বায়ুর স্তর। বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প ও কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস গ্রিন হাউজের কাচের দেয়ালের মতো কাজ করে। দিনের বেলায় সূর্যের আলো বায়ুমণ্ডলের ভেতর দিয়ে ভূপৃষ্ঠে এসে পড়ে এবং ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয়। রাতে ভূপৃষ্ঠ থেকে সেই তাপ বায়ুমণ্ডলে ফিরে আসে এবং ভূপৃষ্ঠ শীতল হয়। কিন্তু কিছু তাপ বায়ুমণ্ডলের ঐ গ্যাসগুলোর কারণে আটকা পড়ে। ফলে রাতের বেলায়ও পৃথিবী উষ্ণ থাকে। আর তাপ ধরে রাখার এই ঘটনাকেই গ্রিন হাউজ প্রভাব বলে। তাপ ধরে রাখার জন্য দায়ী এসকল গ্যাসই হলো গ্রিন হাউজ গ্যাস।

মানুষের কর্মকাণ্ড ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন

বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, কলকারখানা ও যানবাহনে কয়লা, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো হয়। এই জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ুমণ্ডলে অনেক পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস নির্গত হয়। পাশাপাশি বনভূমি ধ্বংসের ফলে গাছপালার মাধ্যমে কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণের হার কমছে। ফলে বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে। বেশি পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড বেশি করে তাপ ধরে রাখছে। ফলে দিন দিন পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াই হলো বৈশ্বিক উষ্ণায়ন।

বাস্তব ঘটনা থেকে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন পর্যবেক্ষণ

তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি আমরা হিমালয় পর্বতমালার হিমবাহ গলনের হার থেকেও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারি। এছাড়া বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে মেরু অঞ্চলের বরফ গলছে এবং সমুদ্রের পানির উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

Content added By

জলবায়ু পরিবর্তন

177
177

প্রশ্ন : জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবিলায় আমরা কী করতে পারি?

কাজ : অভিযোজনের উপায়

কী করতে হবে:

১. কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে ছোট ছোট দল তৈরি করি। নিচের মানচিত্রটি পর্যবেক্ষণ করি। মানচিত্রে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক           দুর্যোগ দেখানো হয়েছে। 

২. নিজ নিজ এলাকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ চিহ্নিত করি। দুর্যোগ মোকাবিলার বিভিন্ন প্রস্তুতি আলোচনা করি। 

৩. কাজটি নিয়ে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করি।

Content added By

সারসংক্ষেপ

127
127

বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন জলবায়ুর এই পরিবর্তন বিভিন্ন প্রাকৃতিক সমস্যা সৃষ্টি করবে ও দুর্যোগকে আরও ভয়াবহ করে তুলবে। জলবায়ু পরিবর্তন বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করবে। যেমন— 

- ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের হার ও মাত্রা বৃদ্ধি করবে। 

- হঠাৎ ভারী বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক বন্যা দেখা দেবে। 

- বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে খরা দেখা দেবে। 

- সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে এবং নদীর পানিতে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করবে। 

জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাব মোকাবিলা করার জন্য আমরা দুইটি কৌশল অবলম্বন করতে পারি। একটি হলো “জলবায়ু পরিবর্তনের হার কমানো”। অপরটি “জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানো বা অভিযোজন ”।

জলবায়ু পরিবর্তনের হার কমানো

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ হচ্ছে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি। সুতরাং বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমনের পরিমাণ কমিয়ে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কমাতে পারি। এজন্য কয়লা, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে। নবায়নযোগ্য শক্তি যেমন— সৌর শক্তি, বায়ু শক্তি ইত্যাদির ব্যবহার বাড়াতে হবে। বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে আমরা বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাইঅক্সাইড হ্রাস করতে পারি। দৈনন্দিন জীবনে শক্তির ব্যবহার কমিয়েও আমরা কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমন কমাতে পারি। এই সকল কর্মকাণ্ড দীর্ঘমেয়াদী জলবায়ু পরিবর্তন হ্রাস করতে সহায়তা করবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানো বা অভিযোজন

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের হার কমানোর জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তবে জলবায়ুর যে পরিবর্তন ইতোমধ্যে সাধিত হয়েছে তার সাথে আমাদের খাপ খাওয়াতে হবে। পরিবর্তিত জলবায়ুতে বেঁচে থাকার জন্য গৃহীত কর্মসূচিই হলো ‘জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানো বা অভিযোজন'। অভিযোজনের উদ্দেশ্য হলো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ঝুঁকি কমানো ও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ। যেমন— 

- ঘরবাড়ি, বিদ্যালয়, কলকারখানা ইত্যাদি অবকাঠামোর উন্নয়ন; 

- বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ ; 

- উপকূলীয় বন সৃষ্টি ; 

- লবণাক্ত পরিবেশে বাঁচতে পারে এমন ফসল উদ্ভাবন ; 

- জীবন যাপনের ধরন পরিবর্তন ; 

- জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কিত ধারণা সকলকে জানানো ।

জলবায়ুর পরিবর্তন বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টিতে প্রধান ভূমিকা পালন করে। ছবিতে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর বিভিন্ন উপায় দেখানো হলো—

বাংলাদেশ পৃথিবীর দুর্যোগপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যে একটি। আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হই। এ সকল দুর্যোগের মধ্যে রয়েছে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, খরা, টর্নেডো, নদী ভাঙন ইত্যাদি। তাই আমাদের বাংলাদেশের জলবায়ু সম্পর্কে জানা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য পূর্ব প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন।

Content added By

অনুশীলনী

131
131

সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন:

১) বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কী ? 

২) বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রধান কারণ কী ? 

৩) বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের একটি উদাহরণ দাও। 

৪) পরিবেশের উপর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব কী ? 

বর্ণনামূলক প্রশ্ন :

১) গ্রিন হাউজের ভিতরের পরিবেশ গরম থাকে কেন? ব্যাখা কর। 

২) জলবায়ু পরিবর্তনের হার কমানো এবং এর সাথে খাপ খাওয়ানো কীভাবে সম্পর্কিত ? 

৩) কীভাবে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হার কমাতে পারি ? 

৪) পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল গ্রিন হাউজের কাচের মতো কাজ করে কেন ? 

৫) জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানো বা অভিযোজন কী ব্যাখ্যা কর । 

৬) পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে আমাদের জীবনে এর কী প্রভাব পড়বে?

Content added By
Promotion